206073

পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের প্র্রায় ৮০ কিলোমিটার ভেতরে প্রবেশ করে ভারতীয় যুদ্ধবিমান

সান্দ্রা নন্দিনী : পাকিস্তানের আকাশসীমা পেরিয়ে দেশটির সন্ত্রাসী ঘাঁটিতে বিমান হামলা চালিয়েছে ভারত। সংবাদসংস্থা এএনআই জানায়, স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ৩টার কিছু সময় পরে এই হামলা চালানো হয়। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাসভবনে নিরাপত্তা ইস্যুতে মন্ত্রিসভার জরুরি বৈঠক ডাকা হয়। ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল প্রধানমন্ত্রীকে এই সেনা অভিযান নিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন দিয়েছেন। এনডিটিভি, আনন্দবাজার, ডন

মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং বিমানবাহিনীকে হামলার জন্য অভিনন্দন জানান। অন্যদিকে, ইউনিয়ন মন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘ভারতীয় বিমানবাহিনীর পক্ষ থেকে পাকিস্তানকে একটি সমুচিত জবাব দেওয়া হয়েছে।’ ভারতের সেনাবাহিনীর একাধিক সূত্র এনডিটিভি’কে জানায়, ‘১২টি মিরাজ-২০০০ যুদ্ধবিমান অভিযানে অংশ নিয়ে লাইন অব কন্ট্রোল-এলওসি পার হয়ে পাকিস্তানের একটি সন্ত্রাসী ঘাঁটি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত করতে ১ হাজার কেজি বোমা নিক্ষেপ করেছে।’

সূত্রমতে, সোমবার অত্যন্ত সুপরিকল্পিত বিমান অভিযানটি ১০০ ভাগ সফল হয়েছে। বালাকোট সেক্টর থেকে পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের প্র্রায় ৮০ কিলোমিটার ভেতরে প্রবেশ করে ভারতীয় যুদ্ধবিমান। এরপর বালাকোট, চাকোটি ও মুজাফ্ফারাবাদে জইশ-ই-মোহাম্মদের তিনটি লঞ্চপ্যাড ধ্বংস করে ভারত। বিমান হামলায় পাকিস্তানি জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মোহাম্মদের কন্ট্রোলরুম আলফা-৩ বিধ্বস্ত হয়েছে। প্রায় ২১ মিনিট ধরে পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের আকাশে ছিল ভারতীয় বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমানগুলি।

ভারতীয় সেনাবাহিনী সূত্র জানায়, চকোটিতে বোমাবর্ষণ করা হয়েছে রাত ৩টে ৫৮ মিনিট থেকে ভোর ৪টে পর্যন্ত। আবার, মুজাফ্ফারাবাদে বোমাবর্ষণ চলে রাত ৩টে ৪৮ মিনিট থেকে ৩টে ৫৫ মিনিট পর্যন্ত। এই হামলায় ২০০ থেকে ৩০০ জন নিহত হয়েছে দাবি ভারতের। অভিযানের পর ভারতীয় বিমান বাহিনীকে অভিনন্দন জানিয়ে টুইট করেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী। তিনি লিখেছেন, ‘ভারতীয় বিমানবাহিনীর পাইলটদের সালাম জানাই।’

অন্যদিকে, পাকিস্তানের সংবাদসংস্থা ডন জানায়, ভারতীয় বিমানবাহিনীর হামলার পর স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সকালে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কুরেশি তার মন্ত্রণালয়ে জরুরি বৈঠক ডাকেন। এক বিবৃতিতে ভারতের উদ্দেশ্যে হুঁশিয়ারি দিয়ে কুরেশি জানান, ‘পাকিস্তানকে চ্যালেঞ্জ করা ঠিক হবে না। আশাকরি, দিল্লির শুভবুদ্ধির উদয় হবে। পাকিস্তানের জনগণের চিন্তার কোনও কারণ নেই। কেননা, যেকোনও ব্যর্থ অভিযান প্রতিহত করার সবরকম প্রস্তুতিই পাকিস্তানের রয়েছে।

এর আগে, পাকিস্তানের ইন্টার-সার্ভিস পাবলিক রিলেশনস-আইএসপিআর ডিরেক্টর জেনারেল মেজর জেনারেল আসিফ গফুর মঙ্গলবার সকালে টুইট-বার্তায় জানান, পাকিস্তানের আকাশসীমা লঙ্ঘন করে মুজাফ্ফরবাদে প্রবেশ করেছে ভারতীয় বিমানবাহিনী। পাকিস্তান বিমানবাহিনীও তাৎক্ষণিকভাবে তাদের প্রতিরোধ করতে এগিয়ে যায়। পরবর্তীতে ভারতীয় যুদ্ধবিমানগুলো ফিরে যায়।’ পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর মুখপাত্র জানান, ভারতের বিমান হামলায় কোনও হতাহত কিংবা ক্ষয়-ক্ষতির ঘটনা ঘটেনি।

প্রসঙ্গত, গত ১৪ ফেব্রুয়ারি জঙ্গি হামলায় ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পুলওয়ামায় সিআরপিএফ’র ৪০ জনেরও বেশি সদস্য নিহত হয়। পরবর্তীতে হামলার দায় স্বীকার করে জইশ-ই- মোহাম্মদ। পাকিস্তান-পরিচালিত ওই জঙ্গি সংগঠনের কার্যকলাপের বিরুদ্ধে সরব হয় দিল্লি। জঙ্গি সংগঠনটির প্রধান মাসুদ আজাহারের নাম জাতিসংঘ ঘোষিত জঙ্গি তালিকায় তোলারও দাবিও জানায় দিল্লি।

পাঠকের মতামত

Comments are closed.