242675

হজ ও ওমরার নির্ধারিত তাওয়াফে ইজতিবা-রমল-ইসতিলাম

অনলাইন সংস্করণঃ- হজ ও ওমরার জন্য কাবা শরিফ তাওয়াফ করা ফরজ কাজ। তাওয়াফ না করলে হজ হবে না। এ ছাড়াও রয়েছে নফল তাওয়াফ। সারা বছরই কাবা শরিফ তাওয়াফ করা যায়। তবে হজ ও ওমরার জন্য নির্ধারিত যে তাওয়াফ; তাতে তাওয়াফে রয়েছে বিশেষ ২টি কাজ। আর তাহলো- ইজতিবা, রমল।

হজ ও ওমরা পালনের সময় প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেভাবে কাবা শরিফ তাওয়াফ করেছেন, হাদিসে পাকে তা সুস্পষ্টভাবে উঠে এসেছে-

হজরত জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মক্কা আগমন করলেন, তিনি মসজিদে হারামে প্রবেশ করলেন। অতঃপর হাজরে আসওয়াদে ইসতেলাম (স্পর্শ) করলেন (চুম্বন করলেন)। অতঃপর ডান দিকে অগ্রসর হলেন- এতে তিনি (প্রথম) ৩ চক্কর রমল (হাত দুলিয়ে জোরে চলা) করলেন; আর ৪ চক্কর স্বাভাবিকভাবে হাটলেন।’ (তিরমিজি)

ফরজ তাওয়াফে ইজতিবা ও রমল
যাদের জন্য কাবা শরিফ তাওয়াফ করা ফরজ। তাদের জন্য দুটি কাজ করা জরুরি; আর তাহলো- ইজতিবা ও রমল।

ইজতিবা
তাওয়াফের সময় গায়ের চাদরকে ডান বগলের নিচে দিয়ে চাদরের উভয় মাথাকে বাম কাঁধের ওপর দিয়ে এক মাথা সামনে আর অন্য মাথা পেছনে ফেলে তাওয়াফ করা। তাওয়াফের সময় এভাবে বীর-বাহাদুরি সুলভ ভঙ্গিতে গায়েল চাদর পরিধান করাই হলো ইজতিবা। এটা বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাত।

রমল
হজ ও ওমরার তাওয়াফের প্রথম ৩ চক্করে রমল করেছেন প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আর তাহলো তাওয়াফের সময় বীরদর্পে দুই হাত, শরীর ও কাঁধ দুলিয়ে দ্রুত গতিতে চলা।

তাওয়াফে ‘ইজতিবা ও রমল’ করার রহস্য
মুসলমানদের হিজরতের পর মক্কার মুশরিকরা বলাবলি করতে লাগলো যে, ইয়াসরিবে (মদিনা) হিজরতকারী মুসলমানরা আবহাওয়া ও অন্যান্য কারণে দুর্বল ও রুগ্ন হয়ে গেছে। মুশরিকদের এ অহেতুক মিথ্যা অপবাদের প্রেক্ষিতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুসলমানদেরকে তাওয়াফের সময় প্রথম ৩ চক্করে রমল তথা বীরদর্পে বাহাদুরি সুলভভাবে চলার নির্দেশ দেন। তারপর থেকে হজ ও ওমরার ফরজ তাওয়াফে আজও সে বিধান অপরিবর্তিত রয়ে গেছে।

তাওয়াফের জন্য ইসতেলাম
যারা কাবা শরিফ তাওয়াফ করবেন তা ফরজ হোক আর নফল হোক সব তাওয়াফেই ইসতেলাম বা স্পর্শের মাধ্যমে তাওয়াফ শুরু করা। সম্ভব হলে হাজরে আসওয়াদ স্পর্শ তথা চুমু খেয়ে তাওয়াফ শুরু করা। সম্ভব না হলে দূর থেকে হাজরে আসওয়াদের দিকে দু’হাত কাধ বরাবর ওঠিয়ে ইশারা বা ইঙ্গিত করে তাওয়াফ শুরু করা। আর এ রকম করাই ইসতেলাম হিসেবে সাব্যস্ত হবে।

নারীদের ক্ষেত্রে ইজতিবা, রমল ও ইসতেলাম
নারীদের জন্য ইজতিবা ও রমল নেই। তাওয়াফে যে ভিড় হয়; তাতে হাজরে আসওয়াদ বা রোকনে ইয়ামেনিও স্পর্শ বা চুম্বন নিরাপদ নয়। তাই দূর থেকে ইশারা করে তাওয়াফ সম্পন্ন করা অতি উত্তম।

নফল তাওয়াফ
হজ ও ওমরার ফরজ তাওয়াফ ছাড়া স্বাভাবিক সময়ের তাওয়াফে ইজতিবা ও রমল করার কোনো প্রয়োজন নেই। আর এ তাওয়াফের জন্য ইহরামের পোশাকও পরার দরকার হয় না। সাধারণ পোশাকে স্বাভাবিকভাবে হাটার মাধ্যমেই নফল তাওয়াফ করা যায়। হজ ও ওমরার তাওয়াফসহ সব তাওয়াফকারীদের জন্যই বিশেষ ৬০টি রহমত সুনির্ধারিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
‘আল্লাহ তাআলা প্রতিদিন বাইতুল্লাহ শরিফের ওপর ১২০টি রহমত নাজিল করেন। এ ১২০টি রহমতের মধ্যে শুধু তাওয়াফকারীদের জন্যই ৬০টি রহমত নির্ধারিত।’

তবে তাওয়াফের শুরুতে হাজরে আসওয়াদ চুম্বন, স্পর্শ কিংবা ইশারা করে এ দোয়া পড়া-

بِسْمِ اللهِ اَللهُ اَكْبَر – اَللَّهُمَّ اِيْمَنًا بِكَ و بصديقًا بِكِتَابِكَ وَرَفَعًا بِعَهْدِكَ وَ اِتِّبَعًا لِسُنَّةِ نَبِيِّكَ

উচ্চারণ : বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার; আল্লাহুম্মা ইমানান বিকা ওয়া তাসদিকান বিকাতাবিকা ওয়া রাফাআন বিআহদিকা ওয়া ইত্তিবাআন লিসুন্নাতি নাবিয়্যিকা।’

আর রোকনে ইয়ামেনিতে এসে সম্ভব হলে তা স্পর্শ করে কিংবা দু’হাত কাঁধ বরাবর উঠিয়ে ইশারা করে হাজরে আসওয়াদ পর্যন্ত এ দোয়া পড়া-

رَبَّنَا اَتِنَا فِى الدُّنْيَا حَسَنَةً وَّ فِى الْاَخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ

উচ্চারণ : রাব্বানা আতিনা ফিদদুনিয়া হাসানাতাও ওয়া ফিল আখিরাতি হাসানাতাও ওয়াক্বিনা আজাবান্ নার।’

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সব হজ ও ওমরা পালনকারীদের যথাযথ নিয়মে তাওয়াফ সম্পন্ন করার তাওফিক দান করুন। তাওয়াফের ফজিলত ও বরকত লাভ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

 

সূত্র জাগোনিউজ২৪ঃ

পাঠকের মতামত

Comments are closed.