তিন হাজার বছর পুরনো মিসরীয় মমির মুখের কথা!
ডেস্ক রিপোর্ট : ইতিহাস যদি হঠাৎ কথা বলে ওঠে, তা হলে খুলে যেতে পারে অজানা অনেক রহস্যের দ্বার; উন্মোচিত হতে পারে এমন কিছু তথ্য, যা হয়তো আগে জানা যায়নি কোনোভাবেই। তবে হাজার হাজার বছর আগে মৃত কোনো মানুষ কথা বলবে, তা বিশ্বাস করা সত্যিই কঠিন। কিন্তু সেই কঠিন অবিশ্বাস্য কাজটিই করে দেখিয়েছেন একদল ব্রিটিশ বিজ্ঞানী। তিন হাজার বছর পুরনো এক মিসরীয় মমির মুখের শেষ কথা রেকর্ড করতে সক্ষম হয়েছেন তারাÑ যা নিয়ে বিশদ এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিজ্ঞান সাময়িকী সায়েন্স অ্যালার্ট।
প্রতিবেদনে জানানো হয়, তিন হাজার বছর আগে প্রাচীন মিসরের থিবস শহরে ছিল সূর্য ও বায়ুর দেবতা আমন রের বিখ্যাত কর্নাক মন্দির। সেখানকারই পুরোহিত ছিলেন নেসইয়ামুন। খ্রিস্টপূর্ব ১০৬৯ অব্দে এক বিরল রোগে আক্রান্ত হয়ে নেসইয়ামুন মারা যান। শিষ্যরা তার শরীর মমি করে রেখে দিয়েছিলেন পিরামিডের ভেতর। ১৮২৩ সালে ব্রিটিশ প্রত্নতাত্ত্বিকরা মমিটি উদ্ধার করে লন্ডনে নিয়ে যান। এর পর থেকে লন্ডনে লিডস সিটি মিউজিয়ামে দর্শকদের জন্য প্রদর্শন করা হতো মমিটি। গত বছর মমিটি নিয়ে বিশদ গবেষণা শুরু করেন বিজ্ঞানীরা।
গবেষণায় জানা যায়, ৫০ বছর বয়সে নেসইয়ামুন বিরল এক সংক্রমণজনিত রোগে মারা যান। মৃত্যুর আগে তিনি এতটাই দুর্বল হয়ে গিয়েছিলেন যে তার মাড়ি ও দাঁত ক্ষয়ে যেতে শুরু করেছিল। ঠিকমতো কথাও বলতে পারতেন না তিনি, তবে অস্ফুট স্বরে কিছু কিছু শব্দ উচ্চারণ করতে পারতেন। তার মৃতদেহটি এতটাই ভালোভাবে মমি করা হয়েছে যে, মৃত্যুর আগে তিনি শেষ কী বলতে চেয়েছেন, তা জানতে নেসইয়ামুনের স্বরযন্ত্র পরীক্ষা করেন বিজ্ঞানীরা। তারা বলছেন, মানুষের ল্যারিংসে শব্দ তৈরি হয়, আর ভোকাল ট্র্যাক প্যাসেজে সেই শব্দ ফিল্টার হয়ে অর্থপূর্ণ শব্দ তৈরি করে।
এই পুরো বিষয়টাকে একসঙ্গে মানুষের স্বরযন্ত্র বলা হয়। ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের ভাষাবিজ্ঞানী ডেভিড হওয়ার্ড বলেন, তিন হাজার বছর আগে নেসইয়ামুন শেষ যে কথাটা বলেছিলেন, তা জানার জন্য প্রথমে বিজ্ঞানীরা সিটি স্ক্যানের মাধ্যমে মমির ভোকাল ট্র্যাক পরীক্ষা করেন। এর থ্রিডি প্রিন্টারে মমির ভোকাল ট্র্যাকের কপি করে ল্যারিংসে কৃত্রিমভাবে তার কণ্ঠস্বর তৈরি করা হয়। তাতে দেখা যায়, মৃত্যুর আগে নেসইয়ামুন ক্ষীণ কণ্ঠে ‘বেড’ বা ‘ব্যাড’ জাতীয় কিছু উচ্চারণ করেছিলেন। এতে নেসইয়ামুন ঠিক কী বোঝাতে চেয়েছেন, তা এখনো জানা যায়নি। তবে গবেষণা চলছে, আশা করা হচ্ছে শিগগিরই তার এই কথার রহস্যও উন্মোচিত হবে।
এর আগে ২০১৬ সালে একই প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা ৫ হাজার ৩০০ বছর পুরনো ‘ওটজি’ নামে বরফযুগের এক মানুষের মমির কণ্ঠস্বর পুনর্গঠন করেছিলেন। সূত্র : আমাদের সময়