261976

হাতের কব্জি দিয়ে লিখে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে অদম্য মিনারা

ডেস্ক রিপোর্ট : শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী হলেও কোনো বাধাই আটকে রাখতে পারেনি কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার মিনারা খাতুনকে। জন্ম থেকেই তার দুই হাতের কব্জি বাঁকা। হাতে আঙুল নেই তার। তবুও সে থেমে যায়নি।
দু’হাতে আঙুল না থাকলেও এবারে দাখিল পরীক্ষা অংশগ্রহণ করে দু’হাতের কব্জিতে কলম চেপে ধরে রাজারভিটা ইসলামিয়া ফাযিল মাদরাসা কেন্দ্রে পরীক্ষায় খাতায় অনাবরত লিখে সে সবাইকে তাক লাগিয়েছে।

মিনারা শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী হলেও সে তার মনের বল ও পরীক্ষায় ভালো ফল করে মানুষের মতো মানুষ হওয়ার স্বপ্ন বুকে লালন এগিয়ে চলছে। মিনারা খাতুন চিলমারী উপজেলার কাঁচকোল দক্ষিণ বাঁধ এলাকার রফিকুল ইসলাম ও মর্জিনা বেগমের মেয়ে।

মিনারা খাতুন দুই হাতের কব্জির সাহায্যে লিখেই ৫ম শ্রেণির সমাপনী (পিএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পাস করে ভালো ফলাফল অর্জন করে। এবার সে চিলমারী উপজেলার কাঁচকোল খামার সখিনা ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসা থেকে দাখিল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে।

মিনার কাছে হার মেনেছে প্রতিবন্ধকতা। দুই বোনের মধ্যে মিনারা ছোট। জন্মের কিছুদিন পর মাকে হারায় সে। এরপর বাবা বিয়ে করেন সংসারে আসে নতুন মা। বাবা দিনমজুর দিন আনে দিন খায়। অভাবের সংসার। এক থাকার আশ্রয় স্থান ছিলো বাঁধে তাও ভেঙে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

জীবনের এমন নানা প্রতিকূলতার মাঝে ও নানা বাধার মধ্যেও সে থেমে না গিয়ে দুই হাতের কব্জির সাহায্যে কলম ধরে সে লেখাপড়া চালিয়ে আসছে মিনারা। সে কব্জির সাহায্যে সাংসারিক বিভিন্ন কাজে বাবা ও মাকে সহায়তা করেছ।

ছোট বেলা থেকেই তার পড়ার প্রতি আগ্রহ দেখে বাবা মা তাকে স্থানীয় কেডি ওয়ারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়ে দেন। মিনারা পড়তে পারলেও লিখতে পারেনি। তারপরও সে মনবল হারায়নি কখনো। অদম্য সাহসের সঙ্গে বড় বোনের সহায়তায় বাড়িতে বসে বসে দুই হাতের কব্জির সাহায্যে কলম জড়িয়ে ধরে লিখতে শেখে মিনারা।

তার শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরাও অন্যান্য ছাত্র-ছাত্রীদের মতই যত্ন সহকারে তাকে লেখাপড়ায় সহযোগিতার হাত বাড়ান। সমাজসেবা অধিদফতর ও মাদরাসা থেকে সে উপবৃত্তি যা পায় তা দিয়ে কষ্ট হলেও চলে তার লেখাপড়ার খরচ।

কাঁচকোল খামার সখিনা ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার মাওলানা আইয়ুব আলী আকন্দ জানান, মিনারা ছাত্রী হিসেবে ভালো। মিনারার মাদ্রাসায় লেখা-পড়ার সকল প্রকার দায়িত্ব আমরা নিয়েছিলাম। আমি অদম্য মেধার অধিকারী মিনারা খাতুনের উজ্জল ভবিষ্যত কামনা করছি।

রাজারভিটা ইসলামিয়া ফাযিল মাদরাসা দাখিল পরীক্ষা কেন্দ্রের কেন্দ্র সচিব অধ্যক্ষ মিনহাজুল ইসলাম বলেন, দুই হাতের সাহায্যে লিখে মিনারা ভালো পরীক্ষা দিচ্ছে। পরীক্ষায় কব্জির সাহায্যে তার অনাবরত লিখে যাওয়া দেখে অনেকে অবাক হয়েছেন।

তিনি আরো বলেন, মিনারা প্রতিবন্ধী হওয়ায় তাকে নিয়ম অনুযায়ী বেশি সময় দেয়া হয়েছে। আমরা মিনারার উজ্জল ভবিষ্যত ও পরীক্ষায় ফলাফল ভালো করবে এমনটি আশা করছি।

এ ব্যাপারে চিলমারী ইউএনও এ ডব্লিউ এম রায়হান শাহ্ বলেন, মিনারার মাঝে অনেক গুণ রয়েছে সে ভালো কিছু করতে পারবে। তিনি মিনারা খাতুনকে সহযোগিতা করাসহ তার পাশে থাকার চেষ্টা করবেন বলেও জানান।

অদম্য মেধাবী মিনারা খাতুন বলেন, আমি লেখাপড়া শেষে করে আমি মানুষের মতো মানুষ হতে চাই। আমার মতো প্রতিবন্ধীসহ মানুষের সেবা করতে চাই। আমি যেন আমার মতো প্রতিবন্ধীদের পাশে দাঁড়াতে পারি। এজন্য আমি সবার কাছে আমার জন্য সহযোগিতা কামনা করছি। সূত্র : ডেইলি বাংলাদেশ

পাঠকের মতামত

Comments are closed.