231299

‘লাইলাতুল কদর’ আপনার ভাগ্যলিপি খণ্ডনের সময়

ডেস্ক রিপোর্ট : আজ জুমাতুল বিদা। মাহে রমজানের শেষ জুমার দিন মুসলিম বিশ্বে ‘জুমাতুল বিদা’ নামে পরিচিত। এদিন রমজান মাসের শেষ জুমা হিসেবে ‘আল কুদস দিবস’ পালিত হওয়ায় এর গুরুত্ব, তাৎপর্য ও মাহাত্ম্য অপরিসীম। সাপ্তাহিক জুমার নামাজ মুসলমানদের বৃহত্তর জামাতে অনুষ্ঠিত হয়। রমজান মাসের জুমাবার আরও বেশি গুরুত্ব বহন করে। এক মাসের সিয়াম সাধনা শেষে মুসলিম মনে যে ঈদুল ফিতরের আনন্দ আসে তারই বার্তা জানান দেয় জুমাতুল বিদা। প্রতি সপ্তাহের জুমা দিবসে মুসলিম মনে এক নয়া জাগরণ সৃষ্টি হয়। ইসলামে জুমাতুল বিদার সরাসরি গুরুত্ব বহনকারী কোনো বক্তব্য না পাওয়া গেলেও একে কেন্দ্র করে মানুষের হৃদয়ে আনন্দ বয়ে যায়। তবে আমাদের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ দিন হলো লাইলাতুল কদর বা শবেকদর।

শবেকদর মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে উম্মতে মুহাম্মদির জন্য বিশাল এক নেয়ামতের ভাণ্ডার। শবেকদরের রাতে বান্দা মহান আল্লাহতায়ালার নৈকট্য লাভের এক বিশেষ সুযোগ পেয়ে থাকে।

‘শবেকদর’ হলো ‘লাইলাতুল কদর’-এর ফারসি পরিভাষা। ‘শব’ অর্থ রাত বা রজনী আর আরবি ‘লাইলাতুন’ শব্দের অর্থও রাত বা রজনী। কদর অর্থ সম্মানিত, মহিমান্বিত, ভাগ্য ইত্যাদি। সুতরাং লাইলাতুল কদরের অর্থ সম্মানিত রাত বা রজনী, মহিমান্বিত রজনী বা ভাগ্যরজনী। শবেবরাতের ইবাদত হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। সে জন্য কিংবা যেহেতু এ রাতে বান্দার পরবর্তী এক বছরের অবধারিত ভাগ্যলিপি ফেরেশতাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়, তাই এ রাতকে ‘লাইলাতুল কদর’ বলা হয়।

লাইলাতুল কদরের ফজিলত বোঝানোর জন্য মহান আল্লাহতায়ালা মহাগ্রন্থ আল কোরআনে ‘কদর’ নামে একটি সুরা অবতীর্ণ করেন। শুধু পবিত্র কোরআনেই নয়, বরং হাদিসে ও শবেকদরের ফজিলত সম্পর্কিত অসংখ্য বর্ণনা রয়েছে। কদরের ফজিলত সম্পর্কে মহান আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনের সুরা কদরে ইরশাদ করেন : নিশ্চয়ই আমি মানবতার মুক্তির মহান সনদ পবিত্র আল কোরআনকে লাইলাতুল কদরে অবতীর্ণ করেছি। আপনি কি জানেন, লাইলাতুল কদর কী? লাইলাতুল কদর হচ্ছে হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। এ রজনীতে ফেরেশতারা ও জিবরাইল (আ.) তাদের প্রতিপালকের নির্দেশে প্রত্যেক বিষয় নিয়ে অবতীর্ণ হন। এটা শান্তিময় রজনী যা ফজরের উদয় পর্যন্ত অব্যাহত থাকে (সুরা কদর, আয়াত-১-৫)।

আল কোরআনে কদরের রাতকে হাজার মাসের চেয়েও উত্তম বলা হয়েছে। হাজার মাস ৮৩ বছর ৪ মাস হয়ে থাকে। অর্থাৎ হাজার মাস ইবাদত-বন্দেগি করে যে সওয়াব অর্জন করা যায়, সে সওয়াব শুধু এক কদরের রজনীতে ইবাদত-বন্দেগি করে অর্জন করা যায়।

হজরত উমর (রা,) থেকে বর্ণিত- রাসুলে কারিম (সা.) ইরশাদ করেন, ‘রমজানের ২৭ তারিখের রাতের ভোর পর্যন্ত ইবাদত-বন্দেগি আমার কাছে সারা রমজানের অন্য সব রাতের ইবাদত অপেক্ষা অধিক প্রিয় (তিরমিযি শরিফ)।

মহান আল্লাহতায়ালা স্বয়ং এ রাতের দুটি নাম রেখেছেন। ১. লাইলাতুল কদর বা সম্মানিত রাত; ২. লাইলাতুল মুবারাকাহ বা বরকতময় রাত। শবেকদরের রাতে সূর্যাস্তের পর থেকে আরম্ভ হয়ে সুবহে সাদিক পর্যন্ত আল্লাহর খাস রহমত সর্বত্র বর্ষিত হতে থাকে। এ রাত আল কোরআন নাজিলের রাত। এ রাতে পৃথিবীর নিকটতম আকাশে মহান আল্লাহ তার রহমত পুঞ্জীভূত করেন এবং মানুষের প্রার্থনা কবুল করেন। আর তার প্রিয় বান্দাদের ওপর রহমত নাজিল করেন।

হজরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলে কারিম (সা.) ইরশাদ করেন- ‘যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদর পেল কিন্তু ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে কাটাতে পারল না, তার মতো হতভাগা দুনিয়াতে আর কেউ নেই! রাসুলে কারিম (সা.) আরও বলেন, যে লোক শবেকদর থেকে বঞ্চিত হয়, সে যেন সমগ্র কল্যাণ থেকে পরিপূর্ণ বঞ্চিত হলো (ইবনে মাজাহ)।

শবেকদরে চার শ্রেণির মানুষকে ক্ষমা করা হবে না। তাদের কোনো কিছুই আল্লাহর দরবারে কবুল হবে না যতক্ষণ না তারা এসব অপকর্ম থেকে সংশোধন হবে। এ চার শ্রেণির মানুষ হলো- ১. মদপানে অভ্যস্ত ব্যক্তি; ২. মাতাপিতার অবাধ্য সন্তান; ৩. আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী; ৪. হিংসা-বিদ্বেষ পোষণকারী ও সম্পর্ক ছিন্নকারী।

শবেকদর এমন এক মহিমান্বিত রাত, যে রাত সম্পর্কে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, শবেকদরের রাতে হজরত জিবরাইলের (আ.) নেতৃত্বে ফেরেশতারা পৃথিবীতে চলে আসেন। প্রত্যেকের মাগফিরাতের জন্য দোয়া করেন, যারা দাঁড়িয়ে কিংবা বসে এবাদত করে থাকেন।

হাদিসে বর্ণিত, রাসুলে কারিম (সা.) এরশাদ করেন- যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে সওয়াব লাভের আশায় লাইলাতুল কদরের রাতকে ইবাদতের মাধ্যমে সারা রাত জাগরণ করে কাটাবে, তার পূর্বকৃত গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।

অপর হাদিসে বর্ণিত, হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) রাসুলে পাককে (সা.) জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল (সা.), আমি যদি লাইলাতুল কদর সম্পর্কে জানতে পারি, তাহলে আমি ওই রাতে আল্লাহর কাছে কী দোয়া করব? রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন; তুমি বলবে, ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন, তুহিব্বুল আফওয়া; ফাফু আন্নি।’ অর্থাৎ ‘হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল, ক্ষমা করতে ভালোবাসেন; তাই আমাকে ক্ষমা করে দিন’ (ইবনে মাজাহ)।

কদরের রজনীতে আমাদের করণীয় :লাইলাতুল কদরের ফজিলত অপরিসীম। তাই সারা রাত জেগে সঠিকভাবে ইবাদত-বন্দেগিতে মনোনিবেশ করা সবার জন্য একান্ত কর্তব্য। বেশি বেশি নফল নামাজ, সালাতুস তাসবিহ, কোরআন তিলাওয়াত, দান-সাদকা, জিকির-আজকার, তাসবিহ-তাহলিল, তাওবা-ইস্তিগফার, দোয়া-দরুদসহ অন্যান্য নফল ইবাদতের প্রতি মনোযোগী হওয়া একান্ত জরুরি। মহান আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা, তিনি আমাদের সবাইকে শবেকদরের রজনী ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে কাটিয়ে ইহকালীন শান্তি ও পরকালীন মুক্তি অর্জনে তৌফিক দান করুন। সূত্র: সমকাল

পাঠকের মতামত

Comments are closed.